ইউক্রেনে নিজেদের লক্ষ্য পূরণের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে রাশিয়া এবং মস্কো যুদ্ধের সব ক্ষেত্রে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এই মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্র গোয়েন্দা প্রধান সের্গেই নারিশকিন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সরকারি প্রকাশনা রাজভেদচিকে তিনি বলেছেন, ফ্রন্টলাইনের পরিস্থিতি কিয়েভের পক্ষে নেই। যুদ্ধের সব ক্ষেত্রে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি আমরা পৌঁছে গেছি।২০২২ সালে ইউক্রেনে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসনে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ও লক্ষাধিক মানুষের বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে। ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের পর মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
নারিশকিন আরও বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করার ক্ষমতা ও বৈধতা হারিয়েছেন।
সোভিয়েত যুগের কেজিবি’র প্রথম প্রধান অধিদফতরের উত্তরসূরি সংস্থা এসভিআরের নেতৃত্বে আছেন নারিশকিন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। তার বক্তব্য থেকে ক্রেমলিনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনোজগতের আভাস পাওয়া যায়, যারা ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করে। তাদের বিশ্বাস, মস্কোর শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করতেই এসব করছে ওয়াশিংটন।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষকে ‘যুদ্ধের পাগলামি’ হিসেবে অভিহিত করে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, সোমবার জেলেনস্কি যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য তদবির করেন। এছাড়া, ন্যাটো জোটে ইউক্রেন যোগদানের আগ পর্যন্ত সেখানে বিদেশি সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দেন তিনি ।
ইউক্রেনে বর্তমানে মস্কোর নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল আকারে আমেরিকার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের সমান। ২০২২ সালের আক্রমণের প্রথম দিকের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী।
ওপেন সোর্সের ম্যাপে দেখা গেছে, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় কুরাখোভে ও টোরেস্ক শহরে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
রয়টার্স গত মাসে জানিয়েছিল, ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি আছেন পুতিন। তবে তিনি বড় ধরনের কোনও আঞ্চলিক ছাড় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ও কিয়েভকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে বলেছেন।
পুতিন বলেছেন, শান্তি চুক্তি করতে হলে ইউক্রেনে দখলকৃত চারটি অঞ্চল পুরোপুরি রুশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যেগুলো বর্তমানে তার বাহিনীর আংশিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পশ্চিমা দেশ ও ইউক্রেন এই যুদ্ধকে মস্কোর সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে। পুতিন জয়ী হলে বিশ্বের অন্যান্য পশ্চিমাবিরোধী শক্তি সাহস পাবে বলেও সতর্ক করেছে তারা।
পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাত শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে, যখন ইউক্রেনের ময়দান বিপ্লবে রুশপন্থী প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ও রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে। সেই সময় থেকেই রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।