দেশ চলছে অনাকাঙ্খিত কচ্ছপের গতিতে তাও হযবরল
হাফিজ ছিদ্দিকী
মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট ও ইসলামী গবেষক
————————————————–
অবশেষে সমালোচনায় কলম ধরতে বাধ্য হলাম। ৫ ইং আগষ্টের বিপ্লব পরবর্তীতে যতই দিন পার করছি ততই হতাশার দোলাচালে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা। দেশের এমন কোনো এলাকা বা এমন কোনো সেক্টর ছিলোনা এই বিপ্লবের বাহিরে। কোটি কোটি জনগনের সাড়া জাগানোর মাঝে অবশ্যই একদল ছিলো এই বিপ্লবের আর্কিটেক। যারা একটির পর একটি ফরমান জারি করবে আর বিপ্লবের জনশক্তি তা বাস্তবায়ন করবে। ১৯৭১ সালের একটি অপরিকল্পিত যুদ্ধকে রুপ দিয়েছে মাঠের কর্মীরা। বলতে গেলে এক নেতার নামেই সেদিনের স্বাধীনতার যুদ্ধ পূর্ণতা লাভ করে। সৈনিকরা অস্ত্র ধরেছে, বুদ্ধিজীবীরা ষ্টাকচার দাঁড় করিয়েছে, রাজনীতিকরা যুদ্ধক্ষেত্র তৈরী করেছে, শিল্পিরা বিপ্লবী গান বানিয়েছে, চারুশিল্পীরা বিভৎসতার ছবি এঁকেছে, আইনজ্ঞরা কুটনৈতিক দায়ীত্ব সম্পাদন করেছে, যুবকেরা জাতীয় পতাকা ও সংগীত রচনা করেছে। কেউ কারো জন্য থেমে থাকেনি বরং আপন মহিমায় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে আমাদের স্বাধীনতার সমাপ্তী টেনেছে।
২৩ বছরের বিদেশি শক্তির চাইতে ১৬ বছরের অভ্যন্তরীণ স্বৈরাচারী শক্তি আরও শক্তিশালী ছিলো কারন তারা এদেশের মাটিতেই অবস্থান করেছে। সারাদেশের অতিষ্ঠ মাজলুম জনতা একই সময়ে সংঘটিত হয়ে রাজপথে নেমেছে। যারা সংগঠিত করার রুপকার তারাই বিপ্লবের মূল কান্ডারী। আমাদের বিশ্ব বরেণ্য একজন সিপাহসালার দরকার ছিলো তাও পেয়েছি।
এরপর আমাদের করনীয় ফরমূলায় আমরা একটার পর একটা ভূলের মাঝেই প্রায় একশত দিন অতিক্রম করার পরও আমাদের দেখার মতো সফলতা না পাওয়ায় আম-জনতা ফেঁপে উঠেছে। আমরা গরুর কাজে ছাগলের ব্যবহার করছি, চিত্র পরিচালক, শিল্পপতি এমনকি আধমরা বৃদ্ধ ও স্থান পেয়েছে। একটি দেশ পরিচালনা এনজিও নয় বরং রাজনৈতিক দক্ষ লোকজনকে বেশী প্রয়োজন। অখ্যাত অজ্ঞ অনভিজ্ঞ মানুষ দিয়ে কাঠামো দাঁড় করার কান্ড জ্ঞানহীন অপচেষ্টা করে যাচ্ছি। বিগত ১৬ বছর দলীয় পোশাখের বাহিরে অসংখ্য লড়াকুদের জিজ্ঞাসা করারও দায় মনে করছিনা। সেক্টর ওয়াইজ যিনি পারদর্শী তাঁকে ও স্বরন করছি না। আমাদের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ও এস ডি, প্রমোশান বঞ্চিত বহু আমলাকে কাজে লাগাইনি। বিভিন্ন বাহিনীর বঞ্চিতদের কাজের সুযোগ দেইনি। যার ফলে সব সেক্টরে ষড়যন্ত্র চলমান। ফ্যাসিবাদের নিয়োগকৃত প্রেসিডেন্টের কাছে শপথের ধরনা দিয়ে আবার তাকে অপসারণের দাবি করছি। সব চাইতে এটাই হাস্যকর বিপ্লবের মুখে পালিয়ে যাওয়া লোকের পদত্যাগের আলোচনায় সময় নষ্ট করছি। তারই নিয়োগকৃত প্রেসিডেন্ট তো বিপ্লবের সাথে সাথে কাঁথা বালিশ নিয়ে পালানোর কথা ছিলো। কারন জনগন দ্বারা বিপ্লবীদের কোনো সংবিধান থাকেনা বরং তাঁদের এক একটি ফরমানই হলো সংবিধান। দেশের স্থিতিশীলতা আসবে আর বিজ্ঞজনদের টিম গঠন করে সংবিধান রচনা বা সংশোধনী আনা হবে।
দেশে জুলাই আগষ্টের গন-হত্যার বিভৎসতার ইতিহাস রচনা হবে, চলচিত্র তৈরী হবে, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী হবে, চিত্র শিল্পিরা গন-হত্যার চিত্র তৈরি করবে, নাটক হবে, থিয়েটার হবে। সারাদেশের শহীদদের তালিকা হবে, স্মৃতিচারণের ভিডিও হবে, আহতদের সাক্ষাৎ হবে, তালিকা প্রকাশ করা হবে, ইতিহাস হবে, যাদুঘরে স্থান পাবে, আন্তর্জাতিক মানের ছবি তৈরী হবে, বিশ্বের দেশে পেশ করা হবে। বিপ্লবীরা আহ্বায়ক হয়ে সকল মহল ও রাজনৈতিক দলের ঐক্যের ভিত্তিতে পরামর্শ নেবেন। একটি জাতীয় সরকারের রুপরেখা প্রনয়নের আয়োজন করবে। সম্মিলিত ভাবে সকল সেক্টরকে শান্ত রাখা বা দাবি দাওয়ার বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহন করবে।
বৃটিশ পাকিস্তানের তৈরী সংবিধানের আমুল পরিবর্তনে দেশের জনগনের স্বার্থে আভ্যন্তরিণ আইন কাঠামো পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারের আকার বৃদ্ধি করতে হবে। দায়িত্ব বন্টনের মাধ্যমে ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সকল বিভাগীয় সংস্কার সম্পন্ন করে প্রশাসনিক রদবদলের মাধ্যমে শক্তিশালী কমিশন গঠন করে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে শক্ত বিরোধী দল বসিয়ে সংসদের সুপ্রিম কাউন্সিল বা উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ আইন পাশ করিয়ে একটি কার্যকর সংসদের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য গঠন করা অপরিহার্য। দেশের নির্বাহী বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বিচার বিভাগ, পৃথক করন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করা। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস সহ নির্বাচিতদের ক্ষমতা চার বছর ও এক ব্যাক্তি দুই বারের অধিক নির্বাচনে করতে না পারার বিধান করা। আমাদের দেশ রক্ষা বাহিনীর আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছাড়া তারা দেশ রক্ষার জন্য ব্যারাকে অবস্থান করবে। পুলিশ বাহিনীর ভাতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ১৫-৩০ বছরের পুরুষ নারীর সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা ও সামরিক খাতে ব্যায় বৃদ্ধি ও শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতি চালু করে বিগত ৫০ বছরের কাংখিত সুফল জনগনকে উপহার দেয়ার এখনি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকারের হযবরল অবস্থায় আমার সংক্ষিপ্ত মতামত তুলে ধরা হলো।