রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। ঈমান, নামাজের পর প্রত্যেক মুসলমানের ওপর রোজা ফরজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি, ‘পাঁচটি জিনিসের ওপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে: সাক্ষ্য দেয়া আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল; নামাজ কায়েম করা; জাকাত আদায় করা; হজ করা এবং রমজানের রোজা রাখা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৮)
শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত একটি রোজাও পরিত্যাগ করে, সে নিকৃষ্ট পাপী। এবং তাকে পরকালে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। এ বিষয়ে এক হাদিসে হজরত আবু উমামা বাহিলি রা. বলেন—
আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। এ সময় দুজন মানুষ এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বলল, পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারে শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কীসের শব্দ? তারা বলল, এটা জাহান্নামিদের চিৎকার। এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকের কাছে নিয়ে গেল, যাদের পায়ের টাকনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নভিন্ন এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা হচ্ছে এমন রোজাদার যারা রোজা পূর্ণ করার আগে ইফতার করত।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৭৪৯১)
এজন্য শরিয়ত সম্মত কোনো কারণ ছাড়া রোজা ভাঙা যাবে না। রোজা ভাঙার কারণ নিয়ে অনেকের মাঝে সন্দেহ রয়েছে। ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে কিনা এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে।
এ বিষয়ে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতে, রোজা অবস্থায় প্রয়োজনে সাধারণ ইনজেকশন গ্রহণ করা যায় এবং তাতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
তাদের মতে, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ছাড়া অন্য যে কোনো কারণে ইনজেকশন নিলে রোজা নষ্ট হবে না। চাই তা মাংসে নেয়া হোক বা রগে। কারণ ইনজেকশনের সাহায্যে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশকৃত ওষুধ মাংস বা রগের মাধ্যমেই প্রবেশ করানো হয়ে থাকে, যা অস্বাভাবিক প্রবেশপথ, তাই এটি রোজা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য কারণ নয়।
তবে গ্লুকোজ-জাতীয় ইনজেকশন যা খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে রোজা অবস্থায় তা গ্রহণ করা মাকরুহ।
(বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৩, আল বাহরুর রায়েক ২/৪৮৩, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল, খ. ৩, পৃ. ২১৪)