শিক্ষাবোর্ড থেকে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য। নাম ও বয়স সংশোধনের আবেদনের সময় আপলোড করা ডকুমেন্ট সবার জন্য উম্মুক্ত করায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আবেদনকারীরা। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছে, ব্যক্তিগত তথ্য উম্মুক্ত হলে গোপনীয়তার পাশাপাশি সংঘটিত হতে পারে ভয়ংকর অপরাধও।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদে নাম ও বয়সে ভুল থাকলে তা সংশোধন করতে অনলাইনে আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে। ১১টি বোর্ডের সব বোর্ডেই তথ্য সংশোধনের যৌক্তিকতা যাচাই করতে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের পিডিএফ আপলোড করতে হয়। ১০টি বোর্ডে আবেদনকারীর তথ্য ও ডকুমেন্ট কেবল সেবাগ্রহীতা ও বোর্ড কর্তৃপক্ষ দেখতে পেলেও একটি বোর্ডে আবেদনকারীর সব তথ্য ও ডকুমেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বোর্ডের এমন কাণ্ডে চক্ষু চড়কগাছ সেবাগ্রহীতাদের। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের মতো স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন তারা। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় রাখবে বলে ভরসা করে প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকাররা পেয়ে গেলে তো আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।’
প্রযুক্তিগত দুর্বলতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এসব ঘটছে জানিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হলে অপরাধীরা খুব সহজেই তা কাজে লাগাতে পারবে। এর ফলে হতে পারে ভয়ংকর বিপদ। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বিএম মইনুল ইসলাম বলেন, কারো জাতীয় পরিচয়পত্র বা প্রয়োজনীয় তথ্য কেউ পেয়ে থাকলে, সে নানা ধরনের অপরাধ করতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্রটা যার নামে, স্বাভাবিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিন্তু প্রথমে তাকেই এসে ধরবে। তবে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলছেন, আবেদনকারীর তথ্য ও ডকুমেন্ট সুরক্ষিত রাখতে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়াটা তো উদ্বেগের বিষয়। যে বোর্ডে এমনটা ঘটছে, সেখানে সতর্ক করে দিয়েছি যে তথ্য যেন অন্য কেউ জানতে না পারে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ছাড়া সক্ষমতা বাড়াতে প্রযুক্তিগত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও জবাবদিহির আওতায় আনার কথা বলছে শিক্ষা বোর্ড।