ভারতের মাটিতে পর্দা উঠেছে বৈশ্বিক ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের। ইতিমধ্যেই চারটি দল মাঠে নেমে গেলেও বাংলাদেশের কোটি দর্শকের জন্য বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ সকাল ১১টায়, প্রতিপক্ষ চিরচেনা আফগানিস্তান। নান্দনিক ধর্মশালার এই ম্যাচে নামার আগে কম বিতর্ক বয়ে জায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপর দিয়ে। তবুও বাংলাদেশের কোটি ভক্ত সমর্থকদের একটিই চাওয়া রশীদ-নবীদের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু হোক সাকিব-লিটনদের মিশন।
ওয়ানডে ফরম্যাটের অতীত পরিসংখ্যান বলছে, দুই দলের মুখোমুখি দেখায় বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে আছে। বিশ্বকাপেও তাদের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে টাইগাররা। সেই তুলনায় আফগানরা এবার শক্তি-সামর্থ্য নিয়েই মাঠে নামছে। তবে ছাড় দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ, শেষ সময়ের প্রস্তুতি সেরেছে তারাও।
২০১৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শেষ করার পরই সাকিব বলেছিলেন, ভারত বিশ্বকাপে ভালো করবে বাংলাদেশ। সেরা চারে অন্তত খেলবেন তারা। এবার রাজ্যের বিতর্ক মাথায় নিয়ে ভারতযাত্রার আগেও অধিনায়ক অনুরূপ বার্তা দিয়ে গেছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানান, সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে আজ থেকে মিশন শুরু করবেন তারা। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান হওয়ায় প্রত্যাশাও উঁচুতে। তা তারা দেশের মাটিতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারলেও বিশ্বাসের ভিত একটুও নড়েনি। দ্বিপাক্ষীয় সিরিজের পরের এশিয়া কাপে দারুণ একটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগানদের হারিয়ে সুপার ফোরে উন্নীত হয়েছিল দল। যে ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি ছিল। ধর্মশালায় বিশ্বকাপ ম্যাচেও ওপেনিং জুটিতে মিরাজকে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তেমন একটা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন হাথুরুসিংহে। তবে এ ম্যাচে পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম বিশ্বকাপের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো খেলেছেন। লিটন কুমার দাসও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রান পেয়েছেন। নিয়মিত ওপেনিং জুটি ভালো খেলায় টিম ম্যানেজমেন্ট পড়েছে মধুর সমস্যায়। তাই সেরা একাদশ বেছে নিতে ম্যাচের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন কোচ।
তবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যেতে প্রথম বাধা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। অন্যদিকে, আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদী জানিয়েছেন, ‘আমাদের নজর দিতে হবে নিজেদের শক্তি ও তাদের (বাংলাদেশের) দুর্বলতায়। গত ম্যাচে যা হয়েছে, আমাদের সেটা থেকে শিখতে হবে। তারা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল। আমরা সেটি থেকে শিখবো ও আগামীকাল তা প্রয়োগের চেষ্টা করবো। ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করবো আমরা। তাদের প্রতিটি খেলোয়াড়ের ব্যাপারেই পরিকল্পনা আছে। আমরা প্রতিটি খেলোয়াড়ের শক্তি ও দুর্বলতা জানি ভিডিওর মাধ্যমে।’
এই বিশ্বকাপে যে তিনটি ম্যাচ দিনের আলোয় খেলবে বাংলাদেশ, তার দুটি হবে ধর্মশালায় আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ধর্মশালায় ম্যাচ খেলার জন্য সুবিধা হলো সহনীয় আবহাওয়া। পেস বোলারদের জন্য যেটা স্বস্তির। পিচ দেখার পর হাথুরুসিংহের আশা স্পোর্টিং উইকেট হবে। যেখানে বড় স্কোর হবে, ভালো করবেন বোলাররা। সেদিক থেকে ধারণা তিন পেসার ও তিন অলরাউন্ডার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। এতে করে ব্যাটিং গভীরতা বাড়ার সঙ্গে বোলিং বিকল্পও থাকবে। অধিনায়ক সাকিবের জন্য বোলার পরিবর্তন করাও সহজ হবে তখন। তবে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানকে সহজ ভাবার কারণ নেই। বাংলাদেশের মতো তারাও সুপার লিগ থেকে বিশ্বকাপ খেলছে। টানা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে দলটির। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে শুরুতে বাজিমাত করার স্বপ্ন আফগানরাও দেখেন। বিষয়গুলো মাথায় রেখে একাদশ সাজানো, গেম প্ল্যান দেওয়া ভালো। এই পরিকল্পনায়
হাথুরুসিংহের সঙ্গে ভালোভাবে জড়িয়ে সাকিব। কারণ তিনিই থাকবেন মাঠের নেতৃত্বে। জয়-পরাজয়ের দায়-দায়িত্ব বর্তাবে তাঁর ওপর। তাই পেছনের বিতর্ক চাপা দিতে ভালো ক্রিকেট খেলে আফগানিস্তানকে হারাতে মরিয়া থাকবেন সাকিব।