চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হচ্ছে একটি আধুনিক কসাইখানা। এতে হবে না কোন দুগন্ধ; পশু জবাই ছাড়া বাকি সব কাজ হবে হাতের স্পর্শ ছাড়াই। এছাড়া এতে সৃষ্ট বর্জ্য থেকে তৈরি হবে জৈব সার, যা ফসলি জমিতে ব্যবহার করতে পারবেন চাষিরা। এটি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য জবাই করা পশুর মাংস কাটতেও। জানা গেছে, বর্তমান জেলা শহরের পৌর এলাকাধীন বালিগ্রামে একটি কসাইখানা আছে। এটি হয়েছে ১৯৯৭ সালে। আবাসিক এলাকা সত্ত্বেও এখানে পশু জবাই এবং মাংস কাটার যাবতীয় কাজ করা হয় খোলা জায়গায়। পশুর বর্জ্যও খোলা জায়গায় ফেলে রাখার দুর্গন্ধ ছড়ায় পুরো এলাকায়। এ কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকায় থাকা দুটি হাসপাতালর রোগী, স্বজন ও দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে এ এলাকাতেই নির্মাণ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এ কসাইখানা। এতে এলাকাবাসীসহ শহরের বাসিন্দারা খুশি।
মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ পরিষেবা বিভাগ। ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮৫ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হবে আধুনিক এ কসাইখানা। এর নির্মানকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের মে মাসে। তবে এখনও শুরু হয়নি। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। প্রাণিসম্পদ বিভাগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, আগের পুরাতন কসাইখানার জায়গায় নির্মান করা হবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এ কসাইখানা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক প্রকল্পটি। তবে স্থানীয় কিছু মানুষের ভুল বোঝাবুঝি ও বাধার কারণে শুরু হয়নি প্রকল্পের নির্মানকাজ। এমনকি কাজ শুরু করতে না পেরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা, মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সারা দেশে মাত্র ২০-২২ টি এমন আধুনিক কসাইখানা নির্মান প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পৌরসভার পুরাতন কসাইখানার জায়গায় নতুন এ আধুনিক কসাইখানা প্রকল্প একটি। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও এখানে থাকবে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ব্যবহার। শুধুমাত্র পশু জবাই করা ছাড়া বাকি সব কাজ করা হবে হাতের স্পর্শ ছাড়া। এমনকি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও থাকবে উন্নত ব্যবস্থা। এখন যেমন বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে, নতুন কসাইখানায় তা থাকবে না। বরং পশুর বর্জ্য থেকে তৈরি হবে জৈব সার। স্থানীয় বাসিন্দা ও বর্তমান কসাইখানার নৈশপ্রহরী মো. মানজুর আলী জানান, ‘খুবই ভালো একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা চাই, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। একসময় মলমূত্র ও ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড় ছিল এলাকাটি। পরে ১৯৯৭ সালে সেখানে কসাইখানা নির্মাণ করা হয়। এই কসাইখানার জন্য অনেক পরিবেশ দূষণ হয় এ এলাকার। আধুনিক কসাইখানা হলে এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলবে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, বালিগ্রাম এলাকায় মোট ৭৮.২৫ শতক জমি পৌরসভার। পরবর্তীতে কসাইখানার পাশে চক্ষু হাসপাতাল, হার্ট ফাউন্ডেশন ও একটি মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য জমি দান করে পৌরসভা। বর্তমানে প্রায় ৫০ শতক জায়গায় রয়েছে পুরাতন কসাইখানাটি। ২০২২ সালে সেখানে পরিবেশবান্ধব একটি কসাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর পরিবেশ অধিদফতরের একটি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের ছাড়পত্র দেয়। বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়ন করছে। পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজনীন ফাতেমা জিনিয়া বলেন, আগের যে কসাইখানাটি আছে, তাতে ওই এলাকার পরিবেশ দূষণের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। যুগ যুগ ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে পৌরসভার এ কসাইখানাটি। আধুনিক কসাইখানায় সব বর্জ্য অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে রিসাইকেল করে জৈব সার তৈরি করা হবে। সরকারের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন অর রশীদ জানান, ‘সরকার যে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এতে কোনরকম পরিবেশ দূষণ হবে না। এটি হবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। আমরা চাই, কসাইখানার নির্মাণকাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে জরাজীর্ণ যে কসাইখানাটি আছে, এতে পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই। তবে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের আগে ঢাকা থেকে পরিবেশ অধিদফতরের একটি দল সরেজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করে। যেহেতু সেখানে পরিবেশবান্ধব উপায়ে নতুন কসাইখানাটি করা হবে, তাই তারা এর ছাড়পত্র দিয়েছে।