হঠাৎ স্রোত বেড়ে যমুনার পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। গ্রামবাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদীপাড়ের তিনশ ফুট এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়। দুই দিনের ব্যবধানে ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতভিটা,ফসলি জমি ও কবরস্থান বিলীন হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, এমন ভাঙন তারা আগে দেখেননি। এ চিত্র গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুন্সিরহাট এলাকার।
মুন্সির হাটের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, বাড়ির সঙ্গেই তার দোকান। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়। কোন কিছু সরানোর সুযোগ পাননি। মুহূর্তের মধ্যেই দোকানের মালপত্র,টাকা-পয়সা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। স্ত্রী- সন্তানসহ কোনো রকমে জীবন নিয়ে বের হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
বন্যার ধকল না কাটতেই আরেক বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন মুন্সিরহাটের বাসিন্দারা। একদিকে চলছে অঝোরে বৃষ্টি, অন্যদিকে নদীপাড়ের ভয়াবহ ভাঙন। মুন্সিরহাট ক্রস বাধ পয়েন্টে গত জুলাই মাসে ২৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়। গত রোববার থেকে দুই দিনের ভাঙনে ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,৫২ টি পরিবারের বসতভিটা, অসংখ্য গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে শতাধিক দোকান, বাড়ি, মুন্সির হাট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ম মুন্সির হাট জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ। আতঙ্কে লোকজন দোকান ও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। গৃহহারা পরিবারগুলো মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নিয়েছে।
ময়না বেগম বলেন, বসত ভিটা তলিয়ে গেছে। এখন কোথায় থাকব, এ চিন্তায় দিশেহারা। শ্রাবণ মাসে যে ভাঙন শুরু হয়েছে ,এমন ভাঙন জীবনেও দেখিনি। একই কথা জানালেন গৃহহারা আব্দুল করিম। সর্বনাশা নদী ভাঙনে তিনিও গৃহহীন।
এদিকে ভাঙন রোধে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারনে ভাঙন রোধ হচ্ছে না।
সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুাটি জানান, নদী ভাঙনে মুন্সিরহাট এলাকার ৫২টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এই কাজ চলমান না থাকলে হাটের সব দোকান, ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি জামে মসজিদ, মাদ্রাসা, শতাধিক ঘরবাড়ি ও বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙে যাবে। বাধটি ভেঙে গেলে বন্যার পানিতে সাঘাটা উপজেলা সদরসহ বাঁধের পশ্চিমাংশ প্লাবিত হবে।
গা্বান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হোক মুন্সিরহাটের ভাঙনে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে ২০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। কাজের টেন্ডারও হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তবে ভাঙন প্রতিরোধে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মুন্সিরহাট পয়েন্টের ভাঙন সর্বক্ষণ তদারক করা হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে নদীতীর রক্ষায় কাজ চলছে।