শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলংকাকে উড়িয়ে দিয়ে ভারত বিশ্বকাপ শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে নেদারল্যান্ডস। প্রোটিয়াদের ৩৮ রানে হারিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে নতুন নজীর গড়েছে ডাচরা। তাতে চলতি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচের পর দ্বিতীয় অঘটনের সাক্ষী হলো ক্রিকেট বিশ্ব। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ধর্মশালায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ২৪৬ রান তাড়ায় নেমে ৪২.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২০৭ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
দুদিন আগেই দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল আফগানিস্তান। এবার ভারত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় অঘটনেরও সাক্ষী হলো ক্রিকেট দুনিয়া। এবারের মঞ্চটা অবশ্য ধর্মশালা। র্যাঙ্কিংয়ে ১১ ধাপ পেছনে থাকা ডাচরা ৪৪ রানের মধ্যে প্রোটিয়াদের প্রথম চার ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে শুরুতেই অঘটনের বার্তা দিয়ে রেখেছিল। রান তাড়ায় নেমে শুরুটা অবশ্য খারাপ ছিল না প্রোটিয়াদের। দুই ওপেনার টেম্বা বাভুমা ও কুইন্টন ডি কক মিলে ৭.৫ ওভারের মধ্যে দলকে এনে দেন ৩৬ রান। কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় অষ্টম ওভারের শেষ বলে। কলিন অ্যাকারম্যানের বলে কট বিহাইন্ড হন ডি কক। আগের দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানের ইনিংস থামে ২২ বলে ২০ রানে। এরপর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে প্রোটিয়ারা।
বাভুমা সাজঘরের পথ ধরেন এক ওভার পর। ফন ডার মারউইর বলে বোল্ড হয়ে ৩১ বলে ১৬ রানে থামে তার ইনিংস। দলীয় ৪২ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার পল ফন মিকেরেনের শিকার হন এইডেন মারক্রাম। ৩ বলে মাত্র ১ রান করে বোল্ড হন তিনি। দলের খাতায় আর ২ রান যোগ হতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রসি ফন ডার ডুসেন। তাকে সাজঘরের পথ দেখান মারউই। তাতে ৮ রানের ব্যবধানে শুরুর ৪ উইকেট হারিয়ে দারুণ চাপে পড়ে প্রোটিয়ারা। পঞ্চম উইকেটে হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার মিলে হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ডাচদের বোলিং তোপে তাদের জুটি ৪৫ রানের বেশি স্থায়ী হয়নি। জুটি ভাঙে দলীয় ৮৯ রানে। ২৮ বলে ২৮ রান করে লগান ফন বিকের শিকার হন ক্লাসেন। এরপর ক্রিজে এসে মিলারকে সঙ্গ দিতে পারেননি মার্কো ইয়ানসেন। ২৫ বলে ৯ রান করে ফন মিকেরেনের বলে বোল্ড হন তিনি। দলীয় ১৪৫ রানে সাজঘরের পথ ধরেন মিলারও। ৫২ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ রান করে ফন বিকের সুইং মিস করে বোল্ড হন তিনি। তখনো জয়ের জন্য ১২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০১ রান।
শেষদিকে জেরাল্ড কোয়েতজি ও কেশভ মহারাজ লড়াই চালিয়েও ব্যর্থ হন। ২৩ বলে ২২ রান করে আউট হন কোয়েতজি। মহারাজ অবশ্য ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ৩৭ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে কট বিহাইন্ড হন তিনি। তার ইনিংসে কেবল হারের ব্যবধানটাই কমেছে। বল হাতে এদিন দুর্দান্ত ছিলেন ৬ ডাচ বোলারই। সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন লকান ফন বিক। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন পল ফন মিকেরেন, ফন ডার মারউই ও বাস ডি লিডি। ১ উইকেট নিয়েছেন কলিন অ্যাকারম্যান। উইকেট না পেলেও ৫ ওভার বল করে ১ মেডেনে মাত্র ১৯ রান খরচ করেছেন আরিয়ান দত্ত। এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮২ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল ডাচরাও। কিন্তু অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস ক্রিজ আঁকড়ে ধরে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। ৬৯ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৭৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষদিকে ফন ডার মারউইর ১৯ বলে ২৯ ও আরিয়ান দত্তের ৯ বলে ২৩ রানের ঝড়ো ইনিংসে লড়াকু পুঁজি পায় ডাচরা। প্রোটিয়াদের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন
মার্কো ইয়ানসেন, লুঙ্গি এনগিদি এবং কাগিসো রাবাদা। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন জেরাল্ড কোয়েতজি এবং কেশভ মহারাজ। এদিকে ওয়ানডেতে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পেয়েছে ডাচরা। বিশ্বকাপ ইতিহাসেও বড় কোনো দলের বিপক্ষে প্রথম জয় ডাচদের। আগের চার আসরে তাদের জয় ছিল কেবল নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। এবার অর্জনের খাতায় যোগ হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডেতে প্রথম হলেও গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই প্রথমবার যেকোনো সংস্করণে প্রোটিয়াদের প্রথমবার হারানোর স্বাদ পেয়েছিল ডাচরা।