ইরানের ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বশক্তি ও তেহরানকে জরুরিভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) তিনি সতর্ক করেন যে এই চুক্তির সফলতা বা ব্যর্থতা আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ২০১৫ সালে তেহরানের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের একটি চুক্তি হয়। এ চুক্তি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত।
এই চুক্তির অধীনে তেহরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল, বিনিময়ে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়।
তবে ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ওই চুক্তি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ইরানও ওই চুক্তির পরমাণু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, যদিও কূটনীতি সেরা বিকল্প, তবে যুক্তরাষ্ট্রও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী ইরান কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাস নিয়ে গত মাসের শেষ দিকে ইউরোপ ও ইরানের কূটনীতিকেরা বৈঠক করেছেন। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয় সেখানে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজের প্রত্যাবর্তনের আগে এ বিষয় নিয়ে তারা কীভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিষয়ক প্রধান রোজমেরি ডিকার্লো নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, যারা ২০১৫ সালে এই চুক্তিকে একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে অনুমোদন করেছিল। তাদের জন্য ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে কাজ করার এখনই সময়। এই অঞ্চলে আর কোনও অস্থিতিশীলতা সহ্য করা সম্ভব নয়।
এ মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি নিরাপত্তা পরিষদে একটি চিঠি পাঠিয়ে বলেছে, যদি প্রয়োজন হয়, তবে ইরানের পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ হয়ে ওঠা আটকাতে তারা দেশটির ওপর আবারও সব ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রস্তুত। তবে তারা এই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা হারাবে ২০২৫ সালের ১৮ অক্টোবর। তখন এই চুক্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘ প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হবে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করাটা অবৈধ ও ক্ষতিকর হবে। নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইরানকে হুমকি দেওয়া হলে ফলাফল উল্টো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে, এমন কোনও উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে এর উপযুক্ত এবং কঠোর জবাব দেওয়া হবে।জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক নজরদারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) এ মাসে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরান নাটকীয়ভাবে তাদের বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ বাড়াচ্ছে। দেশটি ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করছে। পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে প্রায় ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন।