গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো গাড়িটির বৈধতা যাচাই। আপনি যে গাড়িটি কিনতে যাচ্ছেন সেটির আসল মালিক কে, কাগজপত্র হালনাগাদ আছে কিনা এবং সব ফি পরিশোধ হয়েছে কিনা— এসব নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতারক চক্র একটি গাড়ি একাধিক ব্যক্তির কাছে ভুয়া চুক্তিতে বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অসচেতনতার কারণে অনেকে এই প্রতারণার শিকার হন।
একটি গাড়ি মানে একটি পরিবারের স্বপ্ন। তাই গাড়ি ক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে আইনি জটিলতায় পড়ার ঝুঁকি থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনার বিক্রি করা গাড়ি যদি অপরাধে ব্যবহৃত হয় এবং সেটি এখনো আপনার নামে রেজিস্ট্রেশন করা থাকে, তবে দায়ভারও আপনার ওপর আসতে পারে। একইভাবে মালিকানা পরিবর্তন সম্পন্ন না করে গাড়ি কিনলে বিক্রেতার পক্ষ থেকে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ক্রেতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. ফর্ম টিও ও টিটিও– বিআরটিএ অফিস বা ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহযোগ্য।
২. ফি জমা– গাড়ির ধরনভেদে নির্ধারিত ফি ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
৩. কাগজপত্র– টিআইএন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ঠিকানা প্রমাণপত্র, নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর।
৪. ফিটনেস ও রুট পারমিট সংক্রান্ত নথি– রেজিস্ট্রেশন কপি, ট্যাক্স টোকেন ইত্যাদি।
৫. চিঠি– ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সাধারণ ফর্ম, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারের জন্য অফিশিয়াল প্যাডে আবেদনপত্র।
৬. ইংরেজি ব্লক লেটারে লেখা– স্বাক্ষর নমুনা ও ছবি সংযুক্ত করতে হবে।
৭. গাড়ি পরিদর্শন– বিআরটিএ অফিসে গাড়ি সরেজমিনে দেখাতে হবে।
৮. স্বাক্ষর যাচাই– বিক্রেতাকে সঙ্গে নিয়ে আসা উত্তম, যাতে স্বাক্ষরজনিত কোনো সমস্যা না হয়।
মালিকানা পরিবর্তনের জন্য বিক্রেতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. টিটিও ফর্ম ও বিক্রয় রশিদ– অফিস থেকে সংগ্রহ করে স্বাক্ষর করতে হবে।
২. হলফনামা– জুডিশিয়াল/নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি– বোর্ড রেজুলেশন, অনুমোদনপত্র ইত্যাদি।
৪. ঋণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র– গাড়ি লোনে কেনা হলে ব্যাংকের এনওসি ও লোন স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
৫. জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর– বৈধ নাগরিক বাধ্যতামূলক।
৬. স্বাক্ষর সঠিক রাখা– গরমিল হলে বিক্রেতাকেই সশরীরে অফিসে হাজির হয়ে স্বাক্ষর করতে হবে।
গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উভয়পক্ষেরই উচিত বিআরটিএ অফিসে সরাসরি উপস্থিত হয়ে সব কাগজপত্র ও স্বাক্ষর সম্পন্ন করা। মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থাকলে ভবিষ্যতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই বড় ধরনের আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারেন।